বাংলাদেশেও আঘাত হেনেছে এ করোনাভাইরাস। এ পর্যন্ত কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। সেই সাথে আক্রান্ত আরও ১৭ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে সংক্রমণ রোধে সারাদেশে বাস, ট্রেন ও নৌ চলাচল বন্ধ করে দিতে পারে সরকার।
রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ইউএনবিকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা প্রতিটি ট্রেন ও স্টেশনে সতর্কতা ব্যবস্থা নিয়েছি। এই মুহুর্তে কমলাপুর, বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেটসহ বড় বড় রেল স্টেশনে যাত্রী স্টেশনে প্রবেশ করার আগে হ্যান্ড মেশিনে যাত্রীর শরীরের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে, তারপর ট্রেনে উঠতে বলা হচ্ছে। এসব স্টেশনগুলোতে চিকিৎসকসহ রেলওয়ে স্টাফরা সহযোগিতা করছেন।’
ট্রেনগুলো জীবাণুমুক্ত করতে যাত্রী ওঠার আগে আসন ও হাতলগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ‘তবে ট্রেনগুলো জীবাণুমুক্ত করতে পর্যাপ্ত জীবাণুনাশক ঔষধ নেই। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলা হবে।’
ট্রেনে যাতায়াত করার আগে যাত্রীদের মাস্ক ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সচেতনতা সৃষ্টিতে স্টেশনে স্টেশনে মাইকিং করা হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে রেলপথমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাস যদি খুবই খারাপ অবস্থায় যায়, তখন সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হবে।’
যোগাযোগ করা হলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি বাসে যাত্রী চলাচলে সতর্ক করা হচ্ছে। প্রতিটি বাস মালিককে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাদের এখন প্রতিটি বাস জীবাণুমুক্ত করে যাত্রী পরিবহন করতে বলা হবে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, ‘যদি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেশি হয় সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে আন্তজেলা যাত্রীবাহী যান চলাচল বন্ধের ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরিবহন মালিকরা হতাশ প্রকাশ করেছেন, তাদের যাত্রী কমে গেছে। এগুলো অটোমেটিকালি কমে যাবে। পরিস্থিতি কমিয়ে ফেলবে। তারপরও যদি প্রয়োজন হয়, আমরা ব্যবস্থা নেব।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বাস পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েত উল্লাহ ইউএনবিকে বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আন্তজেলা বাস সার্ভিসে প্রতিটি বাসে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও টিস্যু পেপার রাখা আছে। যে সকল যাত্রী গাড়িতে উঠবে তারা আগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করবে।’
প্রতিটি বাসের সিট জীবাণুমু্ক্ত রাখতে যথাযথ ব্যবস্থা করা হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে সরকার যদি সিদ্ধান্ত নেয় বাস বন্ধ রাখার, তাহলে আমরা বন্ধ করে দেব।’
একই বিষয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালেদ মাহমুদ চৌধুরী ইউএনবিকে বলেন, ‘ইতিমধ্যে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি নৌ বন্দর ও স্টিমারে গত ১ মাস আগে থেকেই সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছি। সদরঘাটসহ প্রতিটি স্টিমারে মেডিকেল টিম আছে। করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে প্রতিটি স্টিমার আমরা জীবাণুমুক্ত রাখতে ব্যবস্থা নিচ্ছি। ইতিমধ্যে সকল স্টিমার মালিকদের সাথে মিটিং করে নির্দেশনা দিয়েছি।’
বর্তমানে লঞ্চ বা স্টিমারে ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে উল্লেখ করে নৌপ্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে যদি নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তাহলে প্রয়োজন হলে নৌ চলাচল বন্ধ করে দেয়া হবে।’
যোগাযোগ করা হলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ইউএনবিকে বলেন, ‘যদি কারও জ্বর, সর্দি ও কাশি থাকে তাহলে কোনো ধরনের ট্রান্সপোর্ট (গণপরিবহন) ব্যবহার করা যাবে না। সর্দি কাশি মুক্ত হলে ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করতে পারবেন।’
সকল পরিবহন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি পরিবহন- বাস, ট্রেন ও স্টিমার যাত্রী পরিবহনের আগে অবশ্যই পরিবহন জীবাণুমুক্ত করতে হবে। পরিবহন জীবাণুমুক্তকরণ ছাড়া যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। যে সকল যাত্রী গণপরিবহন ব্যবহার করবেন তাদেরকে অবশ্যই হাত হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা হ্যাক্সাসল দিয়ে জীবাণুমুক্ত করে গাড়ি বা ট্রেন ও স্টিমারে উঠতে হবে।’
মন্ত্রী আরও বলেন, জীবাণুমুক্ত করার কারণ হলো- পরিবহনে কে কোথায় থেকে এসেছে সেটি আপনার জানা নাই। তাই নিজেকে মুক্ত রাখতে হলে সতর্কভাবে গণপরিবহনে চলাচল করতে হবে।
তবে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া এ মুহুর্তে গণপরিবহন ব্যবহার না করার পরামর্শ দেন তিনি।
আরও পড়ুন: দেশে নতুন করে ৩ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত